আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

দুর্গাপূজার আনন্দ ও ঐতিহ্য: এক মনোমুগ্ধকর সামাজিক উৎসব

চিত্র: দুর্গাপূজা 

আজকের সকালটা শুরু হয়েছে এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে। চারপাশে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খের ধ্বনি, উলুধ্বনি আর মানুষের মুখে হাসির ঝলক। শহরের প্রতিটি কোণ যেন আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কারণ আজ দুর্গাপূজা। বছরের এই সময়টা বাঙালির হৃদয়ে এক বিশেষ আবেগ নিয়ে আসে। দেবী দুর্গার আগমন মানেই শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক সামাজিক মিলনের উৎসব, এক সাংস্কৃতিক উন্মাদনা।

সকাল থেকেই পূজামণ্ডপগুলোতে মানুষের ভিড়। নতুন পোশাকে সজ্জিত নারী-পুরুষ, শিশুদের উচ্ছ্বাস, আর বয়স্কদের চোখে আনন্দের ছোঁয়া—সব মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ। প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ অঞ্জলি দিচ্ছে, প্রার্থনা করছে নিজের ও পরিবারের মঙ্গল কামনায়। দেবী দুর্গা যেন সকলের জীবনে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন।

আজকের দিনটি ষষ্ঠী। দেবীর বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ, ধূপ-ধুনোর গন্ধ, আর ফুলের সৌরভে পূজামণ্ডপগুলো যেন এক অন্য জগতে পরিণত হয়েছে। প্রতিমার চোখে আজ যেন জীবন্ততা, যেন তিনি সত্যিই আমাদের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছেন।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় থিম ভিত্তিক পূজার আয়োজন হয়েছে। কোথাও দেখা যাচ্ছে ঐতিহাসিক দুর্গা, কোথাও আবার পরিবেশবান্ধব প্রতিমা। শিল্পীরা মাসের পর মাস ধরে পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন এই অপূর্ব শিল্পকর্ম। দর্শনার্থীরা মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, স্মৃতি ধরে রাখছেন।

আজকের দিনটি শুধু পূজার নয়, এটি এক সামাজিক উৎসবও। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়া, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া—সবই আজকের দিনের অংশ। পূজামণ্ডপে ভোগ বিতরণ চলছে। খিচুড়ি, লাবড়া, পায়েস—সবাই একসঙ্গে বসে খাচ্ছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। এই মিলনই দুর্গাপূজার আসল সৌন্দর্য।




পুলিশ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক দল, এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছে। শিশুদের জন্য আলাদা বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রবীণদের জন্য বসার জায়গা, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সহায়তা—সবই আজকের পূজায় দেখা যাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে, দুর্গাপূজা এখন শুধু ধর্মীয় নয়, এটি মানবিকতার উৎসব।

দুর্গাপূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক গভীর ঐতিহ্য। পুরাণ অনুসারে, মহিষাসুর নামক এক অসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ অধিকার করে নেয়। তখন দেবতারা একত্রিত হয়ে এক মহাশক্তির সৃষ্টি করেন—দেবী দুর্গা। তিনি দশ হাতে দশটি অস্ত্র ধারণ করে মহিষাসুরকে বধ করেন। এই বিজয়কে স্মরণ করেই দুর্গাপূজা পালিত হয়। এটি শুধু একটি পৌরাণিক কাহিনি নয়, বরং মানুষের জীবনে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির প্রতীক।

আজকের পূজায় দেখা যাচ্ছে এক নতুন মাত্রা। প্রযুক্তির ব্যবহার, ডিজিটাল লাইভ স্ট্রিমিং, অনলাইন অঞ্জলি—সবই এখন পূজার অংশ। যারা দূরে আছেন, তারাও এই উৎসবে অংশ নিতে পারছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এটি প্রমাণ করে, দুর্গাপূজা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে।

সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ, কবিতা, নাটক—সব মিলিয়ে এক বর্ণিল সন্ধ্যা অপেক্ষা করছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মঞ্চে উঠে নিজেদের প্রতিভা প্রকাশ করবে। দর্শকরা হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেবে। এই মিলনমেলাই দুর্গাপূজাকে করে তোলে এত প্রাণবন্ত।

আজকের দিনটি শেষ হবে সন্ধ্যার আরতিতে। প্রদীপের আলো, শঙ্খের ধ্বনি, আর ভক্তদের চোখে জল—সব মিলিয়ে এক আবেগঘন মুহূর্ত। দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজের মনের কথা বলবে, নিজের কষ্ট, আশা, আর ভালোবাসা ভাগ করে নেবে।

দুর্গাপূজা আমাদের শেখায় একসঙ্গে থাকার আনন্দ, সংস্কৃতির সৌন্দর্য, এবং মানবিকতার শক্তি। আজকের এই দিনটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই পূজার মাধ্যমে আমরা নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা পাই, নতুন করে ভালোবাসতে শিখি।

আজকের দুর্গাপূজা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আলো আছে, আশার আলো। দেবী দুর্গা যেন আমাদের জীবনে সেই আলো নিয়ে আসেন, আমাদের শক্তি দেন, আমাদের পথ দেখান। এই শুভ দিনে আমরা সবাই একসঙ্গে বলি—জয় মা দুর্গা।

_____________________
লিখক: জান্নাত আক্তার রিয়া 


নবীনতর পূর্বতন