সাভারের মজিদপুর কাঁঠালবাগান এলাকায় ২০২৫ সালের ৮ মে ভোরে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, যেখানে ২৩ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত জাহান শিফা তার বাবা আব্দুস সাত্তারকে হত্যা করেন। ঘটনাটির পরপরই তিনি নিজেই ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানান এবং আত্মসমর্পণ করেন।
ঘটনাটি ঘটে সাভার পৌরসভার মজিদপুর কাঁঠালবাগান এলাকার একটি ভবনের পঞ্চম তলায়। আব্দুস সাত্তার নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ভগা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি মেয়ের সঙ্গে সাভারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিফা তার বাবার খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন এবং রাত ৪টার দিকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বলেন, "আমি আমার বাবাকে হত্যা করেছি। আমাকে গ্রেপ্তার করুন।"
জানা যায়, ২০২২ সালে শিফা তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন, যার ফলে আব্দুস সাত্তার কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা আবার একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তবে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পেছনে দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক চাপ কাজ করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জুয়েল মিয়া জানান, শিফার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনা সাভার এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা এমন নিষ্ঠুর ঘটনা কল্পনাও করতে পারেননি। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়ের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, আবার অনেকে তার মানসিক অবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তদন্তে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনা পারিবারিক সহিংসতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে সমাজকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক কলহ, মানসিক নির্যাতন ও নিরব সহিংসতা সময়মতো চিহ্নিত না হলে তা পরিণত হতে পারে ভয়াবহ অপরাধে। এমন ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
==================================
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন