আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা।

ছবি: সংবাদ সম্মেলন

সাভারে বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান গ্রামে দুই যুবককে গুরুতর জখম করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

সাভার মডেল থানার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া বুধবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গত ২১ জুলাই বিকেলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সুজন শিকদার ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। আয়োজনের সমস্ত খরচ ভুক্তভোগীর পরিবার বহন করেছে।


মামলার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন সাভারের চাপাইন এলাকার সরাফত আলীর ছেলে সুজন শিকদার (ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), বিরুলিয়া ইউনিয়নের সামাইর গ্রামের মৃত রুস্তম সিরালীর ছেলে আমির সিরালী, একই ইউনিয়নের কাকাব গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে শাহিনুর রহমান, নাইরাদি গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে তুহিন আহমেদ, ঋষিপাড়া গ্রামের এনায়েত উল্লাহ ওরফে ফটিকের ছেলে বিল্লাল হোসেন। এছাড়াও, অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী এই ঘটনায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।


অন্যদিকে, হামলায় আহতরা হলেন সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার আজগরা এলাকার ফজল আলী শেখের ছেলে শরীফুল ইসলাম (ছাত্রদলের কর্মী) এবং তার বন্ধু রবিউল ইসলাম রবিন।


পুলিশ ও মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকার সাত্তার মিয়া মার্কেটের সামনে শরীফুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম চা খাচ্ছিলেন। এ সময় সুজন শিকদারের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে করে এসে অতর্কিতে শরীফুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাকে বাঁচাতে রবিউল ইসলাম এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করা হয় এবং তার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়।


ঘটনার পর এলাকাবাসীর চিৎকারে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তারা এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরীফুলের অবস্থা গুরুতর এবং আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় আহত শরীফুল ইসলামের বাবা ফজল আলী শেখ সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন, তিনি।


এই হামলার প্রতিবাদে, ২১ জুলাই ভুক্তভোগীদের পরিবার ছাত্রদল নেতা সুজন শিকদারসহ জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে।


আহত রবিউল ইসলামের মা রওশন আরা বেগম সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একজন গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে তিনি তাঁর শ্রমেই সংসার চালান। তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে সাংবাদিকদের জানান, "আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে এবং এলাকার নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করে। কিন্তু তার কোনো রাজনৈতিক পদ নেই। আমার সন্তান এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমি এই অমানবিক হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি।" তার এই আকুতি স্থানীয় প্রশাসন ও সকলের প্রতি ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।শরীফুল ইসলামের বাবা ফজল আলী শেখ বলেন, তার ছেলে বাসায় ফেরার পথে সুজন শিকদারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে রাস্তায় আটকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।


মামলা দায়েরের পর সাভার মডেল থানার (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং জড়িত অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদেরও শনাক্ত করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে। 


তবে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদার বিষয়টি অস্বীকার করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চাননি! তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।


উল্লেখ্য, হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সুজন শিকদার ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন