আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

Youtube’r Touhid Afridi o tar baba Nasir Uddinke grepter.

ফেসবুক থেকে নেওয়া!

সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জনপ্রিয় ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি এবং তার বাবা, মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর গ্রেপ্তার। একটি গুরুতর মামলায় তাদের এই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনকেই নয়, দেশের গণমাধ্যমের নীতি ও নৈতিকতা নিয়েও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।


গত ১৭ আগস্ট, রোববার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল গুলশানে নাসির উদ্দিন সাথীর নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ২৪ আগস্ট, রোববার রাতে সিআইডি (Criminal Investigation Department) একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ভিত্তিতে তৌহিদ আফ্রিদিকে বরিশালের বাংলাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি গত বছর জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হয়েছিল। মামলায় তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর আসামি এবং তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথী ২২ নম্বর আসামি। এ মামলার অভিযুক্তদের তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৫ জনের নাম রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে চলা আইনি প্রক্রিয়া এবং রিমান্ডের উদ্দেশ্য হলো মামলার গভীরতা অনুসন্ধান করা এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।


এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সামনে এসেছে। প্রথমত, ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদির সঙ্গে তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের একসঙ্গে তোলা ছবি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। তাদের এই সম্পর্কটি ছিল বন্ধুর মতো, যেখানে তৌহিদ আফ্রিদি হারুন অর রশিদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন, ছবি তুলতেন এবং নিজেদের চেনাজানা মহলে তাদের এই ঘনিষ্ঠতার প্রদর্শন করতেন। এ ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তার অনেকের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, নাসির উদ্দিন সাথী মাই টিভির চেয়ারম্যান। এই পরিচয়টিই গণমাধ্যমের নীরবতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।


বাংলাদেশের সব টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং অনলাইন যেমন সময় টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন, কালবেলা, ইত্যাদি পোর্টালগুলো তৌহিদ আফ্রিদি এবং তার বাবার গ্রেপ্তারের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করলেও, মাই টিভি তাদের চেয়ারম্যান ও ছেলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করেছে। এই নীরবতার কারণ হিসেবে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টিকেই উল্লেখ করা হচ্ছে। যখন কোনো সংবাদ মাধ্যম তার নিজের মালিক বা শীর্ষ কর্মকর্তার বিষয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ না করে এড়িয়ে যায়, তখন তা তার নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। নিজেদের চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করলে তাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারতো—এই আশঙ্কায় তারা এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি গোপন রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


এই প্রসঙ্গে, মাই টিভির মালিকানা প্রতিষ্ঠান ডি.এম. ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড একটি প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, মাই টিভি দেশের সব নিয়ম-কানুন ও আইন মেনে বৈধ লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দসহ সব শর্ত পূরণ করে পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচারের অভিযোগ এনেছে এবং সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।


তৌহিদ আফ্রিদি এবং নাসির উদ্দিন সাথীর ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণরূপে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। মামলার তদন্ত চলছে এবং চূড়ান্ত রায় আসবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই ঘটনাটি যেমন তাদের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য একটি বড় ধাক্কা, তেমনি এটি গণমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব এবং স্বচ্ছতা নিয়েও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আদালতের রায়ের পরেই বোঝা যাবে, এই ঘটনার চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে।


মাই টিভি অফিশিয়াল নোটিশ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন