আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন

রানা প্লাজা ধস: বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্মম ভবন দুর্ঘটনা ও গার্মেন্টস শিল্পের জাগরণ

রানা প্লাজা ধস ২০১৩ সালে সাভারে ঘটে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গার্মেন্টস দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত; বিস্তারিত প্রতিবেদন পড়ুন। 


চিত্র: রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপ

রানা প্লাজা ধস: বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নির্মাণ দুর্ঘটনা ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালের সকাল ৮টার দিকে সাভারের কাঁঠালবাগান এলাকায় রানা প্লাজা নামের অষ্টতল ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটিতে মোট আটটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, একটি ব্যাংক, কয়েকটি দোকান ও একটি ফিটনেস সেন্টার ছিল। এই ভবন নির্মাণের সময় অবৈধভাবে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয় এবং নির্মাণ কাজ যথাযথ তদারকি ছাড়াই সম্পন্ন হয়। ধসের পূর্বে ভবনে ফাটল দেখা গেলেও মালিকরা শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যা পরিণামে এক বিশাল মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছিল।


ঘটনাস্থলে দ্রুত উদ্ধার ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়, যেখানে সেনাবাহিনী, দমকল, পুলিশ ও অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করেন। প্রায় ১,১৩৪ জন নিহত হন এবং ২,৫০০-এরও বেশি মানুষ আহত হয়। নিহত ও আহতদের মধ্যে অনেকেই গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক ছিলেন যারা নিজের ও পরিবারের জন্য জীবিকার সন্ধানে কাজ করছিলেন। আহতদের জন্য স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং তাদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন তহবিল গঠিত হয়।


রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্র্যান্ড পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা ও কর্মচারীদের অধিকারের ওপর দৃষ্টি দেয়। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা বিধান কঠোর করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গঠন করা হয়, যার মধ্যে ছিল অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি এবং অ্যালায়েন্স ফর ব্যাংলাদেশ ওয়্যার অ্যান্ড ফ্যাক্টরি সেফটি।


রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে ধরা পড়ে ভবনটি অবৈধভাবে নির্মিত হওয়া এবং নির্মাণের সময় নির্মাণ উপকরণে গুণগত মান না রাখার জন্য তাদের দায়িত্ব নেওয়া হবে। যদিও মামলার দীর্ঘ বিচার কার্যক্রম এখনও চলছে।


ঘটনাটি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়নের ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলে। শ্রমিকদের অধিকারের জন্য সচেতনতা বাড়ে এবং নির্মাণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোর করার দাবি তোলা হয়। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা যেমন দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এই দুর্ঘটনার ব্যাপক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং সমাজে একটি ব্যাপক আলোচনার সূচনা করে।


আহত ও নিহতরা বিভিন্ন হাসপাতাল যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাভার হাসপাতাল এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।


২০২৫ সালে রানা প্লাজার ধসের স্থান এখন একটি স্মৃতিসৌধ ও সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতি বছর দুর্ঘটনার স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বিধান আরও কড়াকড়ি করেছে যাতে ভবিষ্যতে এরকম কোন দুর্ভাগ্য ঘটে না। স্থানীয় মানুষ ও কর্মীরা এখনও ওই ঘটনার স্মৃতি মনে রেখেই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট।


রানা প্লাজা ধস শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী শিল্প ও শ্রমিক নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেছে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকার গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য। এই ঘটনা মানবতার প্রতি এক গভীর স্মারক হয়ে থাকবে চিরকাল।

___________________________________________________________________________________


চিত্র: চাপা পড়া শ্রমিক


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন